জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করুন

আপনার জন্ম সনদের ভুল সংশোধন কিংবা ইংরেজি তথ্য সংযোজন করতে চাচ্ছেন? তাহলে জেনে নিন, ঘরে বসে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন আবেদন করার নিয়ম।

জন্ম নিবন্ধন সনদ করার সময় টাইপিং মিস্টেকের কারণে অথবা ভুল তথ্য দেয়ায় Birth Certificate ভুল চলে আসে। অন্যদিকে সচেতনতার অভাবে অনেক পিতা মাতা শিশুদের জন্ম নিবন্ধনে খেয়াল খুশি মতো তথ্য ব্যবহার করে । পরবর্তীতে এসকল তথ্য আমাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রের সাথে না মিললে জটিলতা দেখা দেয়। জন্ম নিবন্ধনের তথ্যে কোন ভুল থাকলে অনলাইনে আবেদন করে স্বল্প সময়ের মধ্যে তা সংশোধন করা যায়।

অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন আবেদন করার নিয়ম, কি কি কাগজপত্র লাগবে, কত টাকা লাগবে, কি কি তথ্য সংশোধন করা যাবে এবং সংশোধিত নিবন্ধনটি কোথা থেকে সংগ্রহ করতে হবে এবং হাতে পেতে কতদিন লাগবে -এ সকল বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন এই লেখা থেকে। আর যাদের Birth Certificate এখনো অনলাইন করা নাই তারা অনলাইনে নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে পারেন।

Table of Contents

জন্ম নিবন্ধনের তথ্য সংশোধন করবো কিভাবে

জন্ম নিবন্ধনের তথ্য সংশোধন করতে https://bdris.gov.bd/br/correction সাইটে ভিজিট করুন। তারপর জন্ম নিবন্ধন নম্বর ও জন্ম তারিখ দিয়ে সার্চ করুন। আপনার জন্ম নিবন্ধনটি নির্বাচন করে তথ্য সংশোধন পেজে গিয়ে সংশোধনের বিষয় নির্বাচন করুন। তারপর চাহিত সংশোধিত তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করে জন্মস্থানের ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানা পূরণ করুন। এবার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড করে আবেদনকারীর তথ্য দিন এবং ওটিপি যাচাই করুন।  সর্বশেষ আবেদন সাবমিট করে আবেদনের প্রিন্ট কপি ও প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র সংশ্লিষ্ট জনপ্রশাসন কার্যালয়ে জমা দিন।

সংশোধন আবেদন সাবমিট করার পর ইউনিয়ন পরিষদ/ পৌরসভা কার্যালয়ে সংশোধন ফি জমা দিতে হবে। আবেদনটি অনুমোদনযোগ্য হলে এবং উপযুক্ত প্রমাণাদি থাকলে কতৃপক্ষ অনুমোদন করবে। তারপর আপনার নিবন্ধনের তথ্য সংশোধন করা হবে।

জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কি কি কাগজপত্র লাগে

জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের জন্য সংশোধিত তথ্যের স্বপক্ষে উপযুক্ত প্রমানস্বরূপ কিছু ডকুমেন্টস সংযোজন করে আবেদন করতে হবে। সংশোধিত তথ্যের ধরন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ভিন্নতা দেখা যায়। সাধারণত জন্ম সনদ সংশোধনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন করা হয়:

  1. নিবন্ধনকারী নিজের নাম বা নামের অংশ
  2. জন্ম তারিখ
  3. পিতা-মাতার নাম বা নামের অংশ
  4. স্থায়ী ঠিকানা কিংবা বর্তমান ঠিকানা ইত্যাদি

এসব তথ্যের ভিত্তিতে যে সকল ভিন্ন ভিন্ন কাগজপত্র প্রয়োজন হয় তার তালিকা নিচে দেওয়া হলো:

জন্ম নিবন্ধনে নিজের নাম বা নামের বানান সংশোধনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

  • EPI টিকা কার্ড বা হাসপাতালের প্রত্যয়ন পত্র;
  • নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র (NID Card);
  • নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির JSC/SSC/সম্মান ইত্যাদি বোর্ড পরীক্ষার সার্টিফিকেট;
  • পাসপোর্টের কপি;
  • প্রয়োজনীয়তার উপর ভিত্তি করে কাবিন নামার কপিও প্রমাণপত্র হিসেবে সংযোজন করা যাবে।

জন্ম নিবন্ধনে পিতা-মাতার নাম বা নামের অংশ সংশোধনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

  • নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির পিতা-মাতার ডিজিটাল বা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ;
  • নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র;
  • পিতা-মাতার পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি;
  • পিতা বা মাতা মৃত্যুবরণ করলে, মৃত্যু সনদ জমা দিতে হবে (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।

এছাড়াও পিতা-মাতার তথ্যকে জোরদার করার জন্য নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির অন্যান্য ভাই-বোনদের ভোটার আইডি কার্ডের কপি সংযুক্ত করতে পারেন।

জন্ম নিবন্ধনে স্থায়ী ঠিকানা সংশোধনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

কোন শিশু বা ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধনে স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন করতে চাইলে প্রয়োজন হবে-

  • নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি;
  • সংশ্লিষ্ট এলাকার চেয়ারম্যানের প্রত্যয়ন পত্র;
  • হাল সনের হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের রশিদ;

জন্ম নিবন্ধনে বর্তমান ঠিকানা সংশোধনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

জন্ম নিবন্ধনে বর্তমান ঠিকানা পরিবর্তন করা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে বর্তমান ঠিকানা পরিবর্তন কিংবা পূর্বের ঠিকানার বানান/তথ্য সংশোধন করতে চাইলে প্রয়োজন হবে:

  • বর্তমান ঠিকানার ইউটিলিটি বিলের কপি।

এই একটি মাত্র সংযুক্তি দিয়ে খুব সহজেই বর্তমান ঠিকানা পরিবর্তন করা যাবে।

উপরোক্ত যেকোনো তথ্য সংশোধনের আবেদন করার ক্ষেত্রে কমপক্ষে একটি প্রমাণপত্র সংযোজন করতে হবে। তবে জটিল তথ্য, যেমন: নিজের নাম, পিতা মাতার নামের মূল অংশ বা সম্পূর্ণ, জন্ম তারিখের তথ্য সংশোধন করা কঠিন। তাই আবেদনটি গ্রহণযোগ্য করার জন্য উপযুক্ত একাধিক প্রমাণপত্র সংযোজন করাই উত্তম।

অনলাইনে জন্ম এর সংশোধন আবেদন করার নিয়ম

অনলাইনে রেজিস্টার জেনারেলের কার্যালয়, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সম্পর্কিত স্থানীয় সরকার বিভাগের ওয়েবসাইট থেকে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করা যায়। জন্ম সনদের তথ্য সংশোধন করতে উপযুক্ত প্রমাণাদি পূর্বেই সংগ্রহ করতে হবে। একইসাথে প্রতিটি সংযুক্তি ফাইলের সাইজ 100KB এর নিচে রেখে এডিট করতে হবে।

যেই ডিভাইস থেকে আবেদন করবেন, তাতে এই ফাইলগুলো সংরক্ষণ করে সংশোধন আবেদনের জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন।

ধাপ ১: জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন ওয়েবসাইটে প্রবেশ

বাংলাদেশের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সম্পর্কিত সকল কার্যক্রম এখন অনলাইন ভিত্তিক পরিচালিত হয়। জন্ম নিবন্ধন আবেদন, যাচাই, ডাউনলোড কিংবা সংশোধন ইত্যাদি সকল কিছুই পরিচালনা করা হয় bdris ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের অনলাইন আবেদন ফরমে প্রবেশ করতে সরাসরি ভিজিট করুন, https://bdris.gov.bd/br/correction -এই লিংকে।

ধাপ ২: কাঙ্খিত জন্ম নিবন্ধন অনুসন্ধান

ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর, সর্বপ্রথম একটি অনুসন্ধান ফরম সম্পর্কিত পেজ দেখতে পাবেন। আপনি যেই জন্ম সনদটির তথ্য সংশোধন করতে চাচ্ছেন সেই সনদটি অনলাইন থেকে এখানে যাচাই করতে হবে। তার জন্য ২ টি তথ্য পূরণ করতে হবে। যথা:

  • প্রথম ঘরে, ১৭ সংখ্যার ডিজিটাল/ অনলাইন জন্ম নিবন্ধন নম্বর লিখুন।
  • দ্বিতীয় ঘরে, আপনার কাঙ্ক্ষিত জন্ম নিবন্ধন টি অনুসারে সঠিক জন্ম তারিখ লিখুন।
  • তৃতীয় ঘরে, একটি ক্যাপচা ইমেজ দেখতে পাবেন। এই ইমেজে যে সকল সংখ্যা এবং ইংরেজি অক্ষর রয়েছে, তা সঠিকভাবে নিচের ‘Enter Captcha’ ঘরে লিখুন। (অবশ্যই খেয়াল রাখবেন, ছোট হাতের অক্ষর/ বড় হাতের অক্ষর এবং সংখ্যা যেন ঠিক থাকে)।

সকল তথ্য পূরণের পর নিচের ‘অনুসন্ধান’ বাটনে ক্লিক করুন।

ধাপ ৩: আপনার জন্ম নিবন্ধন নির্বাচন

জন্ম নিবন্ধন নম্বর ও জন্মতারিখ দিয়ে অনুসন্ধান করার পর আপনার কাঙ্খিত জন্ম সনদটির তথ্য দেখতে পাবেন। এখানে প্রদানকৃত তথ্য অনুসারে পাওয়া জন্ম সনদের- জন্ম তারিখ, নিবন্ধিত ব্যক্তির নাম, পিতার নাম এবং মাতার নাম দেখতে পাবেন। 

এসকল তথ্যগুলো আপনার কাঙ্খিত জন্ম নিবন্ধনের হলে, সর্বশেষে থাকা ‘নির্বাচন করুন’ বাটনে ক্লিক করে পরবর্তী পেজে যান।

ধাপ ৪: কাঙ্খিত সংশোধিত তথ্য পূরণ

এই পেজটি জন্ম তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদন করার মূল পেজ। এখানে আপনি যে সকল তথ্য সংশোধন করতে চাচ্ছেন, তা নির্বাচন করে চাহিত সংশোধিত তথ্য পূরণ করতে পারবেন। তবে একটি জন্ম নিবন্ধন সর্বোচ্চ ৭ বার সংশোধন আবেদন করা যাবে।

আপনার কাঙ্খিত প্রতিটি তথ্য সংশোধনের জন্য ৩ টি অংশ পূরণ করতে হবে। তার জন্য ধারাবাহিকভাবে পূরণ করুন-

(১) সংশোধিত তথ্যের বিষয় নির্বাচন করুন (যেমন: নাম ইংরেজিতে, বয়স, পিতার নাম ইংরেজিতে, মাতার নাম ইংরেজিতে, , ঠিকানা ইত্যাদি)। একটি জন্ম নিবন্ধনের যত তথ্য রয়েছে, তার সবগুলো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংশোধনের জন্যই এখানে নির্দিষ্ট বিষয় পাবেন।

(২) চাহিত সংশোধিত তথ্য পূরণ করুন। এই ঘরটি খুবই সতর্কতার সাথে কাঙ্ক্ষিত সঠিক ও নির্ভুল তথ্য দিয়ে পূরণ করতে হবে। আপনি সংশোধনের যেই বিষয়বস্তু নির্বাচন করেছেন, তার তথ্য পরিবর্তন/সংশোধন করে নতুন যেই তথ্যটি সংযুক্ত করতে চাচ্ছেন তা এই ঘরে লিখুন। এক্ষেত্রে, সংশোধনের বিষয়বস্তুটি- নাম ইংরেজিতে হলে, চাহিত সংশোধিত তথ্যের ঘরে নিবন্ধনকারীর ইংরেজি নামটি লিখুন। (যেমন: আব্দুল হালিম = Abdul Halim লিখুন)। বয়স সংশোধন করতে চাইলে, ক্যালেন্ডার থেকে সঠিক তারিখ নির্বাচন করতে হবে।

(৩) তথ্য সংশোধনের কারণ নির্বাচন করুন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এখানে ‘ভুল লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল’- এই অপশনটি সিলেক্ট করা হয়। তবে আপনার সংশোধনের জন্য ভিন্ন কোনো কারণ থাকলে তা নির্বাচন করতে পারেন।

এভাবে একটি তথ্য পূরণ সম্পন্ন হবে। আপনি যদি একই সাথে একাধিক তথ্য সংশোধন করতে চান, তাহলে নতুন তথ্য সংযুক্ত করতে- ‘আরো তথ্য সংযোজন করুন’ লেখাতে ক্লিক করতে হবে। তারপর নতুন আরেকটি লাইন আসলে সেখানে উপরোক্তভাবে তথ্য পূরণ করতে হবে। তথ্য পূরনের পর কোন সংশোধনী তথ্য অপ্রয়োজনীয় হলে বা বাদ দিতে চাইলে, লাইনের শেষে থাকা ‘Delete’ বাটনে ক্লিক করুন।

ধাপ ৫: ঠিকানার তথ্য পূরণ

জন্ম নিবন্ধন এর যেকোনো তথ্যই সংশোধন করতে চান না কেন, আপনার ঠিকানার তথ্য পূরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে জন্মস্থানের ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানার বিস্তারিত তথ্য দিতে হয়। প্রথমে জন্মস্থানের ঠিকানা অপশনের ধারাবাহিকভাবে পূরণ করুন-

  • নিবন্ধনকারীর দেশ,
  • বিভাগ,
  • জেলা,
  • উপজেলা,
  • ইউনিয়ন,
  • ওয়ার্ড,
  • ডাকঘর (পোস্ট অফিস ও পোস্ট কোড),
  • গ্রাম/ পাড়া/ মহল্লা,
  • বাসা ও সড়ক।

প্রথমে দেশ ও বিভাগ নির্বাচন করার পর, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড নির্বাচন করার অপশন পাবেন।

জন্মস্থানের ঠিকানার তথ্য পূরণের পর, অনুরূপ পদ্ধতিতে আপনার স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানার তথ্য পূরণ করতে হবে। বর্তমান ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা ও জন্মস্থানের ঠিকানা ভিন্ন ভিন্ন হলে, এগুলো স্ব স্ব তথ্য দিয়ে পূরণ করুন। 

ধাপ ৬: প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র সংযোজন

আপনি একটি জন্ম সনদের যেই তথ্যটি পরিবর্তন/সংশোধন করতে চাচ্ছেন তার স্বপক্ষে উপযুক্ত এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রমাণপত্র সংযুক্ত করতে হবে। অন্যথায়, আপনার আবেদনটি বাতিল করা হতে পারে। প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন তথ্যের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ডকুমেন্টের প্রয়োজন হয়। 

ডকুমেন্ট সংযোজন করার জন্য, প্রথমে ‘+সংযোজন’ লেখাতে ক্লিক করুন। তারপর আপনার মোবাইল বা কম্পিউটার থেকে পূর্বে সংরক্ষণ করে রাখা ফাইলটি (ডকুমেন্ট) সিলেক্ট করে দিন। এক্ষেত্রে একাধিক ডকুমেন্ট সংযুক্ত করলে আবেদনটি এপ্রুভ হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

ধাপ ৭: সংযুক্ত ডকুমেন্টের ধরন নির্বাচন

আপনি যেই ডকুমেন্টটি সংযোজন করেছেন তার ধরন নির্বাচন করুন। জন্ম সনদের বিভিন্ন তথ্য সংশোধনের জন্য যে যে ডকুমেন্ট প্রয়োজন হয় তার সবগুলোই এখানে তালিকা আকারে প্রকাশ করা আছে। File type অপশনে ক্লিক করে সঠিক ধরনটি নির্বাচন করুন।

তারপর, ‘Start’ বাটনে ক্লিক করে ডকুমেন্ট আপলোড সম্পন্ন করুন।

ধাপ ৮: আবেদনকারীর তথ্য প্রদান এবং ওটিপি যাচাই

এই ধাপে, আবেদনকারী সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো লিখুন। যেমন: 

  • আবেদনকারী ব্যক্তির সাথে নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির সম্পর্ক কি, তা সিলেক্ট করুন। 
  • আবেদনকারীর নাম লিখুন। (আবেদনকারীর সাথে নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির সম্পর্ক পিতা/ মাতা/ নিজে হলে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাম চলে আসবে)।
  • ফোন নাম্বার লিখুন। তারপর পাশের ‘ওটিপি পাঠান’ বাটনে ক্লিক করুন। 

আপনার দেওয়া মোবাইল নাম্বারে একটি OTP Code (One Time Password) আসবে। সর্বশেষ ঘরে, ওটিপি কোডটি লিখুন।

ধাপ ৯: জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের আবেদন পত্র সাবমিট

ওটিপি কোড ভেরিফাই করার পরই সংশোধনের  আবেদন সাবমিট করতে পারবেন। তারপর ‘সাবমিট’ বাটনে ক্লিক করে আবেদন সম্পন্ন করুন। আবেদন সাবমিট করার পর একটি অ্যাপ্লিকেশন আইডিসহ আবেদনপত্র প্রিন্ট করার অপশন আসবে। এখান থেকে আপনার আবেদনের অ্যাপ্লিকেশন আইডিটি কপি করে বা কোথাও লিখে সংরক্ষণ করুন। পরবর্তীতে, সংশোধিত নিবন্ধনটি পেতে এই অ্যাপ্লিকেশন আইডিটি প্রয়োজন হবে।

আপনার ডিভাইসের সাথে প্রিন্টার সংযুক্ত থাকলে, আবেদনের কপিটি প্রিন্ট করে নিন। আপনি চাইলে আপনার আবেদনের অবস্থা জানতে পারবেন।

জন্ম নিবন্ধন সংশোধন আবেদন পত্র প্রিন্ট

জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের আবেদন সম্পন্ন করার পর, ‘আবেদন প্রিন্ট করুন’ লেখাতে ক্লিক করে সংযুক্ত প্রিন্টারের মাধ্যমে আবেদনের কপিটি প্রিন্ট করা যায়। অথবা, অ্যাপ্লিকেশন আইডিটি ব্যবহার করে পরবর্তীতে এটি প্রিন্ট করতে পারবেন। সেজন্য আপনার ‘ইউজার আইডি’ ও ‘পাসওয়ার্ড’ ব্যবহার করে bdris ওয়েবসাইটে লগইন করে আবেদনটি প্রিন্ট করতে পারবেন।

পরবর্তীতে ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা কার্যালয়ে সেই আবেদনের প্রিন্টেড কপি বা অ্যাপ্লিকেশন আইডি দিয়ে সংশোধিত কপিটি নিতে হবে।

জন্ম নিবন্ধন বয়স সংশোধন করার নিয়ম

জন্ম সনদের প্রায় সকল তথ্যই সংশোধন করা যায়। তবে বর্তমানে জন্ম নিবন্ধনের বয়স সংশোধন করা সবচেয়ে কঠিন এবং জটিল বিষয়। নাগরিকদের নিরাপত্তা এবং সরকারি নীতিমালার কথা বিবেচনায় রেখে জন্ম নিবন্ধনের বয়স পরিবর্তন করা জটিল করা হয়েছে।

তবে, উপযুক্ত প্রমাণপত্র থাকলে এবং জন্ম সনদ নিবন্ধনের সময় তথ্য ভুল লিপিবদ্ধ হয়েছে তা নিশ্চিত করতে পারলে, বয়স সংশোধন করা যাবে। জন্ম নিবন্ধন সনদের শুধুমাত্র দিন এবং মাস সংশোধন করতে পারবেন। 

সাধারণত বয়স সংশোধন করতে EPI টিকা কার্ড, জাতীয় পরিচয়পত্র,  JSC/SSC/সম্মান পরীক্ষার সার্টিফিকেট, পাসপোর্টের কপি, কাবিন নামার কপি এবং অঙ্গীকারনামা -এসকল কাগজপত্র সংযোজন করতে হয়। জন্ম তারিখ সংশোধনের ক্ষেত্রে সময় একটু বেশি লাগে এবং ১০০ টাকা সংশোধন ফি জমা দিতে হয়।

জন্ম নিবন্ধন নাম সংশোধন করার নিয়ম

জন্ম নিবন্ধনের নামের বানান কিংবা আংশিক নাম পরিবর্তন করা সহজ। তবে নামের মূল অংশ বা সম্পূর্ণ নাম পরিবর্তন করা প্রায় অসম্ভব। 

আংশিক নাম পরিবর্তন করতে নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র,  JSC/SSC/সম্মান পরীক্ষার সার্টিফিকেট, পাসপোর্টের কপি ইত্যাদি সংযুক্ত করতে পারেন। এক্ষেত্রে ৫০ টাকা ফি দিতে হয়। 

জন্ম নিবন্ধনে ইংরেজি তথ্য সংযোজন

পূর্বে অনলাইন করা অধিকাংশ জন্ম নিবন্ধনের তথ্য শুধু বাংলা ভাষাতেই bdris ওয়েবসাইটে লিপিবদ্ধ আছে। তাই বাংলা ভাষার পাশাপাশি জন্ম নিবন্ধন ইংরেজি করতে হলে, সংশোধনের আবেদন করতে হয়। 

জন্ম নিবন্ধন ইংরেজি করার জন্য, সংশোধনের বিষয়বস্তু হিসেবে নাম ইংরেজি, পিতার নাম ইংরেজি, মাতার নাম ইংরেজি (প্রয়োজন অনুসারে) সিলেক্ট করতে হবে। তারপর নিবন্ধন অনুসারে বাংলা নামটির সঠিক ইংরেজি বানান লিখুন। সর্বশেষ, সংশোধনের কারণ হিসেবে ‘ভুল লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল’ সিলেক্ট করে আবেদনের বাকি কাজ সম্পন্ন করুন। এক্ষেত্রে ৫০ টাকা ফি দিতে হয়।

জন্ম নিবন্ধনে পিতা/মাতার নাম সংশোধন

জন্ম নিবন্ধনে পিতা/মাতার নামের বানান, আংশিক নাম, পিতা/মাতার নাম ইংরেজিতে, পিতা মাতার জাতীয়তা ইত্যাদি সংশোধনের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে পিতা/ মাতার অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ কিংবা ভোটার আইডি কার্ডের কপি সংযোজন করতে পারেন।

জন্ম নিবন্ধন স্থায়ী ঠিকানা সংশোধন করার নিয়ম

জন্ম নিবন্ধনের স্থায়ী ঠিকানার তথ্য সংশোধন করতে চাইলে, সংশোধনের কোন বিষয় নির্বাচন করতে হবে না। শুধুমাত্র জন্মস্থানের ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানার তথ্যগুলো পূরণ করলেই হবে।

এক্ষেত্রে নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির এনআইডি কার্ডের কপি, চেয়ারম্যানের প্রত্যয়ন পত্র, হোল্ডিং ট্যাক্সের রশিদ সংযোজন করতে হবে। স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তনের সংশোধন ফি ৫০ টাকা।

জন্ম নিবন্ধন সংশোধন আবেদন অবস্থা যাচাই

জন্ম নিবন্ধন সংশোধন আবেদন অবস্থা যাচাই করার জন্য আপনার ইউনিক ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড প্রয়োজন হবে। বর্তমানে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন ওয়েবসাইটের তথ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। 

আবেদনের বর্তমান অবস্থা জানতে ভিজিট করুন- https://bdris.gov.bd/br/application/status এই লিংকে। তারপর লগইন করে আপনার আবেদনের ধরন, অ্যাপ্লিকেশন আইডি ও জন্ম তারিখ লিখুন। এবার ‘দেখুন’ লেখাতে ক্লিক করলেই আপনার আবেদনটির বর্তমান অবস্থা জানতে পারবেন।

জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কত টাকা লাগে

জন্ম নিবন্ধন সনদ সংশোধনের ক্ষেত্রে প্রতিটি সংশোধনী বিষয়ের উপর ভিত্তি করে ভিন্ন ভিন্ন হারে সরকারি ফি দিতে হয়। সাধারণভাবে জন্ম সনদের জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য ১০০ টাকা ফি দিতে হয়। এছাড়া অন্যান্য সকল তথ্য পরিবর্তন বা সংশোধন করতে চাইলে, ৫০ টাকা ফি দিতে হয়।

এছাড়াও বাংলা ও ইংরেজি উভয়ের ভাষাতে জন্ম সনদ সংশোধনের পর দুই ভাষায় সনদের কপি (ফটোকপি) বিনামূল্যে সরবরাহ সরবরাহ করা হবে। তবে বাংলাদেশের বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ/ সিটি কর্পোরেশন/ পৌরসভা কার্যালয়ে অনৈতিকভাবে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন বাবদ ২০০/ ৩০০ টাকা ফি নেওয়া হয়।

জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কত দিন লাগে

জন্ম নিবন্ধনের তথ্য সংশোধন করতে আবেদন করার পর, আবেদনটি গ্রহণযোগ্য হলে এবং উপযুক্ত প্রমাণাদি সংযোজন করা হলে চাহিদা সংশোধিত তথ্য হালনাগাদের জন্য রেজিস্টার জেনারেলের কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট প্রেরণ করা হয়। তারপর সেই তথ্যগুলো পুনরায় যাচাই-বাছাই করে bdris এর ডাটাবেজে অনলাইনে সাবমিট/আপলোড করা হয়।

সাধারণত এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে ৫-৭ কার্যদিবস সময় লাগতে পারে। তবে ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা কার্যালয় থেকে সর্বনিম্ন ৭-১৫ দিনের সময় নেওয়া হয়। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সংশোধিত জন্ম নিবন্ধন পেতে দেড়ি হলে, অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করে তার সংশোধিত সার্ভার কপিটি ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারবেন।

শেষকথা

জন্ম নিবন্ধন এর আবেদন ও সংশোধন অনলাইন ভিত্তিক হওয়ায়, খুব সহজেই নিজে নিজে কাঙ্খিত তথ্য সংশোধনের আবেদন করা যায়। তবে একটি জন্ম নিবন্ধন শুধুমাত্র ৬ বার সংশোধন করা যাবে। তাই একসাথেই এর সকল ভুল তথ্য সংশোধনের আবেদন করা উচিত।

জন্ম নিবন্ধন সংশোধন সম্পর্কে সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ’s)

জন্ম নিবন্ধন কতবার সংশোধন করা যায়?

পূর্বে একটি জন্ম নিবন্ধন সর্বোচ্চ ৪ বার সংশোধন করা যেত। ২০২৩ সালের সর্বশেষ আপডেটের পর থেকে একটি নিবন্ধন সর্বোচ্চ ৭ বার সংশোধন করা যাবে।

আমার জন্ম নিবন্ধনে নামের বানান ভুল থাকলে, সঠিক বানান দিয়ে এনআইডি কার্ড করা যাবে কি?

জন্ম নিবন্ধনের তথ্য ভুল থাকলে, প্রথমে উপযুক্ত প্রমানপত্রের স্বপক্ষে নিবন্ধনের নামের বানান ঠিক করতে হবে। জন্ম নিবন্ধনে ভুল তথ্য রেখে ভোটার আইডি কার্ড করা যাবে না। কারন, আইডি কার্ডের তথ্য জন্ম নিবন্ধন অনুসারে নেওয়া হয়। 

Similar Posts

4 Comments

    1. ভাই আমার জন্ম নিবন্ধনে নাম ঠিক কিন্তু অনলাইনে ভুল

  1. ভাই, আমার বাবার জন্ম নিবন্ধন এর জন্ম তারিখ, আর নাম ভুল আছে এগুলো কি সংশোধন করা যাবে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *