জন্ম নিবন্ধন বাতিল করার নিয়ম 2024

একই ব্যক্তির একাধিক বা ডুপ্লিকেট জন্ম নিবন্ধন থাকলে কিংবা জন্ম নিবন্ধনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভুল থাকলে, জন্ম সনদ বাতিল করার আবেদন করতে পারবেন। এখানে আমরা জন্ম নিবন্ধন বাতিল করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করতে চলেছি।

জন্ম নিবন্ধন প্রতিটি নাগরিকের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র। দেশের নাগরিকত্ব, বয়স, পরিচিতি, শিক্ষা, চাকরি, ভোটার আইডি কার্ড ও পাসপোর্টের সুবিধা পেতে এটি অপরিহার্য। তবে একই ব্যক্তির একাধিক জন্ম নিবন্ধন সনদ থাকলে সুবিধার বিপরীতে তৈরি করতে পারে জটিলতা। ভুল তথ্য দিয়ে আপনার পরিচিতি ব্যবহার করে অন্য কেউ আপনারই জন্ম সনদ ব্যবহার করে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করতে পারে। তাছাড়া যে কোনোভাবেই একজন ব্যক্তির একাধিক জনসনদ থাকা দণ্ডনীয় অপরাধ।

বর্তমানে এই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে মুক্তি পেতে, নিবন্ধক কার্যালয়ে আবেদন করে অতিরিক্ত ও অপ্রয়োজনীয় সনদ গুলো বাতিল করতে পারবেন। ডুপ্লিকেট জন্ম নিবন্ধন বাতিল করার নিয়ম, কি কি লাগবে, কত টাকা লাগবে এবং কোথায় আবেদন করবেন তার বিস্তারিত তথ্য থাকছে এই লেখাতে।

তবে জন্ম নিবন্ধনে ভুল থাকার কারণে যদি সেটি বাতিল করতে চান, সেটি বাতিল না করে সংশোধন করার পরামর্শ দিবো। কারন বর্তমানে খুব সহজে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সনদ সংশোধন আবেদন করা যায়। আবেদন যথার্থ হলে অল্প কিছু দিনেই সংশোধন হয়ে যায়।

জন্ম নিবন্ধন বাতিল করার নিয়ম
জন্ম নিবন্ধন বাতিল করার নিয়ম

জন্ম নিবন্ধন বাতিল করতে কি কি লাগে

একটি জন্ম নিবন্ধন সনদ বাতিল করার জন্য অবশ্যই উপযুক্ত প্রমাণপত্র সহ আবেদন করতে হবে। যে কেউ চাইলেই বেআইনিভাবে বা নিজের সুবিধার্থে জন্ম নিবন্ধন বাতিল করতে পারবেনা। জন্ম নিবন্ধন বাতিল করার জন্য স্থানীয় জনপ্রশাসন কার্যালয়ে যে সকল ডকুমেন্ট জমা দিতে হয়, সেগুলো হলো:

  • যেই সনটটি বাতিল করতে যাচ্ছেন, তার ডিজিটাল বা অনলাইন করা ১৭ সংখ্যার জন্ম নিবন্ধন নম্বর। 
  • জন্ম নিবন্ধন সনদ অনুসারে জন্ম তারিখ।
  • একাধিক জন্ম নিবন্ধন এন্ট্রির বা প্রাপ্তির প্রমাণ। এক্ষেত্রে আপনার সকল জন্ম নিবন্ধন সনদ গুলো সাথে নিতে হবে।
  • জন্ম নিবন্ধন বাতিল করার আবেদন ফি ১০০ টাকা।

শুধুমাত্র অনলাইন করা ডুপ্লিকেট জন্ম নিবন্ধন গুলোই বাতিল করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। জন্ম নিবন্ধনের তথ্য যাচাই করার পর বাতিলের উপযুক্ত বিবেচিত হতে হবে। ২০০১ সালের পূর্বে পুরাতন হাতে লেখা এবং অপ্রয়োজনীয় জন্ম নিবন্ধন গুলো রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয় থেকেই বাতিল করা হয়েছে।

জন্ম নিবন্ধন বাতিল করার নিয়ম

জন্ম নিবন্ধন সনদ বাতিল করার জন্য, অনলাইনে বা লিখিত নিবন্ধন বাতিল ফরম পূরণ করতে হবে। তারপর স্থানীয় জনপ্রশাসন কার্যালয়ে উপযুক্ত প্রমাণপত্র সহকারে আবেদন দাখিল করতে হবে। আবেদনটি গ্রহণযোগ্য হলে এবং সকল প্রমাণপত্র যাচাই বাছাই করার পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা তাদের ইউনিক ইউজার আইডি ব্যবহার করে কাঙ্খিত জন্ম নিবন্ধন সনদ বাতিল করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

২০২৩ সালের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন ওয়েবসাইটের সর্বশেষ আপডেট অনুসারে, অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছে। তাই এখন জন্ম নিবন্ধন বাতিল করার জন্য সরাসরি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদে/ পৌরসভা কার্যালয়/  কাউন্সিলর অফিসে যোগাযোগ করতে হবে।

জন্ম নিবন্ধন সনদ বাতিল করার আবেদন ফরমের সাথে নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির সকল জন্ম সনদের কপি সংযুক্ত করতে হবে। জনপ্রশাসন কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এই নিবন্ধনটি বাতিল করার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইবে এবং আবেদনকারীকে উপযুক্ত কারণ ও প্রমাণসহ বিবৃতি প্রদান করতে হবে। তারপর সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের কর্মকর্তা তাদের ইউনিক ইউজার আইডি ব্যবহার করে bdris সার্ভার থেকে ডুপ্লিকেট জন্ম নিবন্ধন সনদ তদন্ত করবেন। সর্বশেষ একজন ব্যক্তির প্রকৃতপক্ষে একাধিক জন্ম নিবন্ধন এর অধিকারী হলে অপ্রয়োজনীয় সনদটি বাতিল করে দেবেন।

জন্ম নিবন্ধন বাতিলের ফি বাবদ নিবন্ধক কর্মকর্তা ১০০ টাকা ফি আদায় করবে। একাধিক বা ডুপ্লিকেট জন্ম নিবন্ধন সনদ বাতিল করার ক্ষেত্রে পরবর্তীতে ‘জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন (bdris) ওয়েবসাইটে আবেদনের সুযোগ করতে পারে। তবে এর পূর্বেই বর্তমান সময়ে আপনি যদি একাধিক জন্ম নিবন্ধন নিয়ে জটিলতার সম্মুখীন হন তাহলে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদে/ পৌরসভা কার্যালয়/  কাউন্সিলর অফিসে সরাসরি আবেদন করুন।

জন্ম নিবন্ধন বাতিলের আবেদন ফরম পূরণ করার নিয়ম

জন্ম নিবন্ধন বাতিলের আবেদন করার জন্য “বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, মার্চ ৮, ২০১৮” -এর একটি নির্ধারিত ফরম রয়েছে। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদে এই ফরমটি হাতে লিখে জমা দিতে হবে। এই নির্ধারিত আবেদন ফরমটি ডাউনলোড করুন।

আবেদন ফরমটি ডাউনলোড করার পর নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে তা পূরণ করতে হবে:

  • সর্বপ্রথম ঘরে, আপনার ১৭ সংখ্যার জন্ম/ মৃত্যু নিবন্ধন নম্বর লিখুন।
  • জন্ম/মৃত্যু নিবন্ধনের তারিখ লিখুন। এখানে মূলত জন্ম সনদটি ইস্যু করার তারিখ লিখতে হবে।
  • ১ নং ঘরে, নিবন্ধিত ব্যক্তির নাম লিখুন।
  • ২ নং ঘরে, নিবন্ধিত ব্যক্তির জন্ম তারিখ লিখুন।
  • ৩ নং ঘরে, ভুল তথ্যের বিবরণ এবং তার কারণ লিখুন। সাধারণত এটি জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তবে, এখানে একাধিক জন্ম নিবন্ধন থাকার বিষয়টি বিদ্যমান তথ্যের ঘরে লিখে, সংশোধনীর তথ্য ঘরে ‘ডুপ্লিকেট জন্ম নিবন্ধন বাতিল করতে চাই’ লিখতে পারেন। একইসাথে, সংশোধনের কারণ ঘরে ‘ডুপ্লিকেট জন্ম নিবন্ধন’ লিখুন।
  • ৪ নং ঘরে, ‘সত্য’ লিখে একমত পোষণ করুন।
  • ৫ নং ঘরে, সংযুক্ত প্রমাণপত্র গুলোর নাম/ ধরন লিখুন।
  • সর্বশেষে, ডানদিকে থাকা আবেদনকারীর স্বাক্ষর, নাম ও নিবন্ধিত ব্যক্তির সাথে সম্পর্কের তথ্য লিখুন।

আবেদন ফরমের অন্যান্য তথ্যগুলো নিবন্ধকের কার্যালয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা পূরণ করবে এবং তথ্য সংশোধনের নির্ধারিত তারিখ আপনাকে জানিয়ে দেবে।

জন্ম নিবন্ধন বাতিলের আইন

বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য জন্ম নিবন্ধন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র। তাই একটি জন্ম নিবন্ধন তৈরি করা, সংশোধন করা কিংবা বাতিল করার জন্য বেশ কিছু আইন বিবেচন রাখতে হয়।  

৮ই মার্চ ২০১৮ সালের ‘জন্ম নিবন্ধন বিধিমালা ২০১৮’ -তে স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী পঞ্চম অধ্যায়ের ‘ধারা-১৫’ তে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সনদ সংশোধন ও বাতিলের নির্দেশনা সম্পর্কে বলা হয়েছে। 

এই নির্দেশনা অনুযায়ী জন্ম নিবন্ধন বাতিল সম্পর্কে নিম্নোক্ত আইনগুলো প্রণয়ন করা হয়েছে:

(১) ‘জন্ম নিবন্ধন বিধিমালা ২০১৮’ -এর আইনের ধারা ১১, ১৩ ও ১৫ -তে বর্ণিত বিধান অনুসরণ করে রেজিস্টার জেনারেল অথবা তার পক্ষ থেকে ক্ষমতা হস্তান্তরিত অন্য কোন কর্মচারীর নিকট হতে কারিগরি সহায়তা গ্রহণের মাধ্যমে জন্ম কিংবা মৃত্যু সনদ বাতিল/সংশোধন করা যাবে।

(২) ‘জন্ম নিবন্ধন বিধিমালা ২০১৮’ -এর বিধি ২১ এ নির্ধারিত ফি প্রদান করে জমনি ফরম-৮ অনুযায়ী কোন ব্যক্তি একটি জন্ম সনদ বা মৃত্যুসনদ সংশোধন/ বাতিলের জন্য আবেদন করতে পারবে ।

(৩) কোন ব্যক্তির অনুকূলে সরল বিশ্বাসে বা অন্য কোন যৌক্তিক কারণে একাধিক জন্ম বা মৃত্যুনিবন্ধন সনদ ইস্যু করা হয়ে থাকলে, নিবন্ধন প্রাপ্ত উক্ত ব্যক্তি বা তার আইনানুগ কোন অভিভাবকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট নিবন্ধক যাচাই করে অপ্রয়োজনীয় সনদটি বাতিল করবে।

(৪) কোন ব্যক্তির অনুকূলে অসৎ উদ্দেশ্যে এবং মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে একাধিক জন্ম বা মৃত্যু সনদ ইস্যুর তথ্য পাওয়া গেলে, নিবন্ধক সে তথ্য যাচাই করে দায়ী ব্যক্তির সনদ বাতিল করবে এবং সেই দায়ী ব্যক্তি বা তার সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ‘জন্ম নিবন্ধন বিধিমালা ২০১৮’ আইনের ধারা ২১ এর বিধান অনুযায়ী, শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।

(৫) মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে কারো জন্ম বা মৃত্যু নিবন্ধন সনদ বাতিল করা হলে, অভিযোগকারী ব্যক্তির আবেদনক্রমে নিবন্ধক শুনানি গ্রহণ করবে এবং মিথ্যা তথ্য প্রদানকারী/ সনদ লিপিবদ্ধকারী/ সনদ ইস্যুকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিতে পারবে এবং এভাবে অভিযোগ উত্থাপিত হলে রেজিস্ট্রার জেনারেল বা উপ-রেজিস্ট্রার জেনারেলের পূর্বানুমোদনকত্রমে উপযুক্ত আদালতে মামলা দায়ের করতে এবং মামলার রায়ের ভিত্তিতে আইনের ধারা ১৫ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে পারবে। 

(৬) বাতিলকৃত জন্ম বা মৃত্যু নিবন্ধন সনদ সম্পর্কে নিবন্ধন নিজ নিজ কার্যালয়ের নোটিশ বোর্ডে প্রকাশ্যে নোটিশ টাঙ্গানোর মাধ্যমে সকলকে জানাবে।

জন্ম সনদ বাতিলের আবেদন ফি

২০১৮ সালে প্রকাশিত, বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত; “জন্ম নিবন্ধন বিধিমালা, ৮ মার্চ, ২০১৮ -এর ১৫ (২) ধারায় বলা হয়েছে, “বিধি ২১ -এ নির্ধারিত ফি প্রদান করে জমনি ফরম-৮ অনুযায়ী কোন ব্যক্তি একটি জন্ম সনদ বা মৃত্যু সনদ সংশোধন/ বাতিলের জন্য আবেদন করতে পারবে। কিন্তু, বিধিমালার ২১ নং ধারায় জন্ম নিবন্ধন বাতিলের নির্ধারিত ফি সম্পর্কিত কোন তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। 

জন্ম নিবন্ধন বাতিলের নির্ধারিত আবেদন ফি উল্লেখ করা না হলেও, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন বাতিল এবং সংশোধন একই ক্যাটাগরিতে স্থান পাওয়ায়, নিবন্ধন বাতিলের জন্য সংশোধন ফি ১০০ টাকা দিতে হবে। বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে এই কার্যক্রমের জন্য $2 বা ২ মার্কিন ডলার ফি দিতে হবে।

বিকাশ, নগদ এবং রকেট মোবাইল ব্যাংকিং এপের মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধনের সকল ফি পেমেন্ট করা যায়। কোনপ্রকার ঝমেলা ছাড়া জন্ম নিবন্ধন ফি প্রদান করতে দেখুন অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন ফি পেমেন্ট করার নিয়ম

জন্ম নিবন্ধন বাতিল করার জন্য কোথায় আবেদন করতে হয়?

জন্ম নিবন্ধন বাতিল করার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ/ পৌরসভা কার্যালয়/ কাউন্সিলর অফিসে আবেদন করতে হবে। পূর্বে অনলাইনে আবেদন করার অপশন থাকলেও বর্তমানে সরাসরি অফিসে উপস্থিত হয়ে আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার এলাকা ইউনিয়ন ভিত্তিক নাকি পৌরসভা ভিত্তিক তা বিবেচনা করে, আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদে উল্লেখিত কার্যালয়ে যোগাযোগ করুন।

উপরোক্ত নিয়ম অনুসরণ করে এবং জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন/বিধিমালা মেনে অপ্রয়োজনীয় জন্ম সনদ বাতিল করতে পারবেন। ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ একাধিক জন সনদের আবেদন করা থেকে বিরত থাকুন। একইসাথে, জালিয়াতি করে নিয়ে সুবিধায় প্রয়োজনীয় জন্ম সনদ বাতিল করা যাবে না। অন্যথায়, এমন অভিযোগ প্রমাণিত হলে আপনার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *